বন্ধুদাদার চিঠি সেদিন আনন্দ পাঠশালার পাশের রাস্তা দিয়ে স্কুটি চালিয়ে যেতে যেতে একবার দেহলি বাড়িটার দিকে তাকালাম। একা নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে সে। ওকে দেখে আর এগোতে পারলাম না। দাঁড়িয়ে গেলাম। দোতলার ছোট্ট খোলা ছাদের কার্নিশে অল্প অল্প শ্যাওলার আস্তরণ। কয়েকদিনের ক্রমাগত বৃষ্টির ফল। সামনে ছোটদের খেলার মাঠটায় বড় বড় ঘাস জন্মে প্রায় জঙ্গুলে ঝোঁপের আকার নিয়েছে। সবদিক নিস্তব্ধ। এ এক আশ্চর্য নীরবতার কাল। অপার শান্তি বিরাজ করছে আজ চার মাস ধরে আশ্রম প্রাঙ্গণে। এ কাল বড় বিভীষিকার। অদৃশ্য শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পেতে আর কতদিন এই শান্তি বিরাজ করবে আশ্রমে, এই আনন্দ …
প্রেমের পাহাড় তাওয়াং বর্ণালী রায় ‘‘এখন আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই। সেই পাহাড়ের পায়ের কাছে থাকবে গহন অরণ্য, আমি সেই অরণ্য পার হয়ে যাব,...। ...একেবারে চূড়ায়, মাথার খুব কাছে আকাশ, নিচে বিপুলা পৃথিবী, চরাচরে তীব্র নির্জনতা।’’ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর কলমের যাদুতে যে পাহাড় কিনতে চেয়েছিলেন, আমিও তেমন বারবার ফিরে যাই পাহাড়ের কাছে। কিনতে না পারি তার সৌন্দর্য আমাকে চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে যায়। সেইরকমই এক পাহাড় অরুণাচল। আজ কিন্তু আমারা অরুণাচলের একটু অন্যরকম গল্প শুনব। এ গল্প ভালোবাসার গল্প, এ গল্প দেশ প্রেমের গল্প। যে ভালোবাসার সৃজন…
চোরাবালি অমিতকুমার কুণ্ডু স মুদ্রের পারে বালির ওপরে পা ছড়িয়ে বসেও সমুদ্রের সৌন্দর্যের আস্বাদ নেয়া থেকে বঞ্চিত হবার মতো দুর্ভাগ্য এ জগতে নেই। জামাকাপড় ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বোঝার সঙ্গে সঙ্গে এই দুভার্গ্যের বোঝাও শহর থেকে পুরীতে বয়ে এনেছি। সমুদ্রের ভয়াল সৌন্দর্যে নিজেদের শরীর ও মন লবণাক্ত করা অগুনতি জনতার মধ্যে একমাত্র আমিই এরকম সঙ্গীবিহীন ভাবে বালির ওপর বসে রয়েছি। ভেজা নরম বালি। হাত দিয়ে ছেনে ছেনে একটা ছোটো দুর্গ বানিয়ে ফেলা যায়, যেখানে কল্পনায় অপেক্ষায় বসিয়ে দেয়া যায় কোনো বঙ্কিমী দুর্গেশনন্দিনীকে। কিন্তু সেটিও হবার নয়। বা…
দ্বন্দ্ব অনুসূয়া চন্দ্র অ ন্যদিন এতক্ষণে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে, তারপর ঘরের নিত্যকর্ম। আজ যেন নামতেই ইচ্ছে করছে না। ইউরিক অ্যাসিডে সকালটা পা ফুলে ভারী হয়ে থাকে, আজ মনে হচ্ছে তার থেকেও ভারী কিছু! ঠিক কী! বুঝতে পারছি না। মন? না! সে তো ভালো হয়ে গেল। চোখ? না সে তো লজ্জায় লাল। তাহলে? নিজেকে প্রশ্ন করতেই ফোলা ফোলা চোখদুটো ফ্ল্যাশব্যাকে স্বপ্নটা আবার রেজিউম করলো। স্বপ্ন! হ্যাঁ রোজই কত না কত স্বপ্ন দেখি। ঘুম ভাঙে সব ভুলেও যায়। কিছুই মনে থাকে না। হঠাৎ হঠাৎ রাস্তা চলতে বা কথা বলতে গিয়ে মনে হয় একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম না! তারপর আবার সব ভুল…
বই যেন শাড়ি আবীর মুখোপাধ্যায় তা র মতো মতি। ঠিক তার শাড়ি কেনার মতো। দোল, দুগ্গোৎসব, দশেরা— মায় চড়ক মেলাতেও সে শাড়ি কেনে। দর নিয়ে, রঙ নিয়ে, কল্কা নিয়ে, পাড় নিয়ে, জমি নিয়ে, আঁচল নিয়ে কত যে কথা! কেবল গৃহে নয়। টেলিফোনে টেলিফোনে সেই বার্তা রটে যায় সুদূর প্রবাসেও। উৎকর্ণ হয়ে শুনি, ওঁদের মেয়েলি আড্ডার শাড়ি-সংবাদ। চমকপ্রদ তথ্যটি হল, তাকে কখনও পাট ভাঙতে দেখিনি বহু শাড়ির! সে কেনে, পড়ে না! সত্যি কথা কী, এখন আম বাঙালির বই পড়ার অভ্যেস ঠিক ওই শাড়ি কেনার মতো। করোনা কেটে গেলে, ২০২০-র আম বাঙালি ঠিক ফি হপ্তায় কলেজ স্ট্রিটে বইপাড়া যাবে। শেষ দুপুর…
খাদের ধারের রেলিংটা হোমাগ্নি ঘোষ প্রে সিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় আমাদের দ্বিতীয় বাড়ি ছিল কফিহাউস। কলকাতায় মানুষ হলেও আমার শৈশবের দীর্ঘ সময় কেটেছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন চা বাগানে, তিস্তা নদীর পাশে হটাৎ করে নাম না জানা প্রজাপতির সঙ্গে। পাহাড় জঙ্গলে অনেক সময় কাটালেও একটা জায়গা ছোটবেলা থেকে ভীষণ প্রিয় আর কাছের হয়ে গেল আমার কাছে, মন খারাপ হলেই আমি যার কাছে এখনও ছুটে ছুটে যাই, যার খাদের ধারের রেলিং বেয়ে আমি আজো আমার শৈশব খুঁজি, যেখানে গেলে আমার মনে হয় আমার বাবা আমাকে বলছে– জানিস বাবি এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। আজ আমার সেই দার্জিলিঙের ক…
শাওন সুমন ঘোষ এ খনও ওর নম্বরে কল করলেই সেই গানটা বাজে : 'ওরা মনের গোপন চেনে না।' এখনও বাজে। ওর সঙ্গে আমার আলাপ অনেকদিনের। প্রথমে দূরে-দূরে কথা হত। অনেকটা দূরে-দূরে। ও পুকুরে ঢিল ছুঁড়ত আর আমি সেই পুকুরের অন্য প্রান্তে বসে থাকতাম। দেখতাম, ওর ছোঁড়া ঢিল হাওয়ায় উড়তে-উড়তে পুকুরে এসে টুপ করে ডুব দিচ্ছে। আর ঢেউ, নানা রঙের ছোটো-ছোটো ঢেউ, গোল হয়ে দূরের দিকে চলে যাচ্ছে। সেই ঢেউ আস্তে আস্তে ভাঙছে। ভাঙতে-ভাঙতে নানা পাড়ে ছড়িয়ে পড়ছে তারা। আমি যে পাড়ে বসে আছি, সেই পাড়েও তার ছোঁয়া এসে লাগত। না, ঠিক লাগত না। লাগার আগেই আমি চোখ স…
বন্ধু-দাদার চিঠি প্রিয় ছোট্ট বন্ধুরা, অনেকদিন তোমাদের সঙ্গে দেখা হয়নি। কি ভাবেই বা হবে, বলো? আমরা তো সবাই সেই মার্চ মাস থেকে গৃহবন্দি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে। পৃথিবী থেকে যেন খুব শিগগির এই ভয়ানক সংক্রামক ভাইরাসটি বিদায় নেয়, সেই চেষ্টায় দিনরাত লড়াই চালাচ্ছেন পৃথিবীর তাবৎ বিজ্ঞানীরা। তাঁদের কাজের দিকে মুখিয়ে বসে আছি নিরুপায় আমরা। আমাদের পড়াশুনো, লেখালেখি, খেলাধুলো, গানবাজনা, সবকিছুই এখন নেটনির্ভর হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে থেকে আমাদেরও মানসিকভাবে শক্ত থাকা প্রয়োজন। কোনও কাজ থামিয়ে রাখলে আমাদের চলবে না, তাই না? তাই অন্যভাবেই হোক…
ফেরা কাজরী মুখোপাধ্যায় ছু টছিল জবা। শাড়ী উঁচু করে ব্যাগটাকে বগলে চেপে একে ওকে একটু আধটু ধাক্কা মেরে জবা ছুটছিল। দুই চারজন তাকে ‘ঢলানি’ চোখের মাতা খেয়েছে— এসব বলে গাল ও পাড়ছিল। তা এসব কথা কানে নেওয়ার সময় জবার কোনওদিনই থাকে না। সকালে ট্রেন থেকে নেমে ও ছোটে, আবার এই বিকাল সন্ধ্যায় ট্রেন ধরতেওও ছোটে। ওসব মুখ খিস্তি, খারাপ কথা জবার কাছে খোলামকুচির মতো। গায়ে লাগে না। হাঁপাতে হাঁপাতে যখন বালিগঞ্জ স্টেশন এর ওভার ব্রিজে উঠল, ঠিক তখনই শুনতে পেল স্টেশন ঘর থেকে ঘোষণা করছে— বিশেষ কারণের জন্য ৫.২৫ এর ডায়মন্ড হারবার লোকাল বাতিল হয়েছে। ট্রেন চলা…
পান্থ/ ২ ফুনশিলং-এ গোটা রাত দীপশেখর চক্রবর্তী ফু নশিলং এর পাহাড় থেকে পায়ে হেঁটে নেমে আসছি আমি, কল্যাণ এবং সায়ন। পাহাড়ের কোলে বৌদ্ধ গুম্ফাতে অন্ধকার নেমে আসা কাব্যিক ছিল। তবে এই অন্ধকার পাহাড়ের পথ দিয়ে নীচে নেমে আসা তার থেকেও বেশি সুন্দর। উল্টোদিক দিক থেকে আসা গাড়ির বিপদ এড়ানোর জন্য আমরা পাহাড়ের খাদের পাশ দিয়ে হাঁটছি। এমনিতে আমার উচ্চতার ভয় তবে এখন সেসব পাত্তা দিলে চলবে না। পাহাড়ে হেঁটে ওঠার পরিকল্পনাটা আমারই, ফেরার সময় যে কোনও গাড়ি পাবো না এটা বোঝা উচিৎ ছিল। তবে সেই ভুল নিয়ে এখন দুর্বল হলে ওরা দুজন বেশ ঘাবড়ে যাবে। আমার এই যে কোনও বি…
পান্থ/ ১ লেকের নাম খাঁদারানি সায়ন্তী দাস এ মন দিনে তারে বলা যায় এমন ঘনঘোর বরিষায়। এমন দিনে মন খোলা যায়— আর এমন দিন যদি কাটে এক পান্না সবুজ হ্রদের পাড়ে, যার চারপাশে সবুজের কোলাহল। রাশি রাশি অজানা পাখির শব্দমিছিল… সঙ্গে, যে প্রিয়। কেটে যায় বেলা, থাকে না কোনও অবেলা। হৃদয় পূর্ণ সুখস্মৃতিতে, পেয়ালা উপচানো সে মুহূর্তমালা। জেগে থাকে শুধু দুই ভবঘুরে হৃদয়ের অফুরান করতালি। খুব বেশি দূর নয়। কলকাতা থেকে আড়াই ঘণ্টার দূরত্ব। সকালের ইস্পাত এক্সপ্রেস-এ চেপে সোজা ঝাড়গ্রাম। তারপর হোটেলে ঢুকে একটু বিরাম নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া যেতেই পারে বেলপাহাড়ির পথ…
নেইবাড়ির মেয়েরা মেয়েবেলা হারিয়ে গেছে অন্ধকারে। গোল্লাছুটের দুপুর এখন দিগন্তের পাখি। একলা আঁধারে মুখ নেমেছে পথের হাওয়ায়। বাহির থেকে ঘরে ফেরার অশ্রুতপূর্ব-কথার আখ্যান। লিখছেন অঙ্কন রায় আঠারো চাঁ দনির গল্পটা অন্য রকম। মেয়েটা ছিল সহজ সরল একটা গাঁয়ের মেয়ে যেমন হয়, ঠিক তেমনিই। কিন্তু ওর জীবনের মোড় ঘুরে গেল যখন ওর ঠিক পনেরো বছর বয়স। সে বছর ওর ক্লাস টেন। পরের বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। পড়াশোনায় মোটামুটি ভাল মেয়েটা ভালবেসে ফেল্ল ওর দু’ক্লাস উঁচুতে পড়া যে ছেলেটিকে, সে আবার অন্য ধর্মের। সরল মনে ভালবেসেছিল চাঁদনি। ভাবতে পারেনি কি কঠিন হবে তার …
সংযোগ